বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
প্রিয়জনের সান্নিধ্যের সময় যত ঘনিয়ে আসে, প্রেমিক হৃদয়ে বেড়ে যায় অস্থিরতা। অপেক্ষার প্রহর তখন মনে হয় দীর্ঘ।
হৃদয়রাজ্যে কত জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে। ব্যাকুলমনে প্রিয় ক্ষণটির অপেক্ষার প্রহর কাটে।
রমজান মাস যত ঘনিয়ে আসত, তেমনি ব্যাকুল হয়ে উঠতেন আমাদের প্রিয় নবীজী (সা.)। রমজানের দু’মাস আগে থেকেই তিনি পুরোদমে প্রস্তুত হতেন মোবারক এ মাসটির জন্য। এ প্রস্তুতি ছিল শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক সব দিক থেকেই।
রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বারতা নিয়ে রমজান আসে প্রতিবছর। কোরআন নাজিলের বরকতে রমজান হয়েছে পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসের প্রতিটি সময় অনেক মর্যাদাবান। তাই এর প্রস্তুতি নিতে হয় কয়েকমাস আগে থেকেই।
সামান্য একটি উৎসব বা আয়োজন সফল করতে আমরা আগে থেকে অনেক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করি। তাহলে রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ মাসটি কাজে লাগাতে আমাদের প্রস্তুতি কত প্রয়োজন?
প্রিয়নবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে রমজানকে বরণ করতে হয়। রমজানের অফুরন্ত রহমত বরকতে নিজেকে সিক্ত করতে হলে এর প্রস্তুতি নিতে হবে শাবান মাস থেকেই। প্রিয়নবী (সা.) শাবান মাসে নিজেকে পূর্ণভাবে ইবাদাতে মশগুল রাখতেন।
সাহাবাদেরও আদেশ করতেন এ মাসটি পূর্ণভাবে ইবাদতে কাটানোর। রমজানের একটি আবহ তৈরি হয়ে যেত শাবান মাসেই। রমজান যদি হয় সাধনার মাস, তবে শাবান হল সে সাধনার পূর্ব প্রস্তুতির সময়।
আমাদের নিজেদের আয়োজনগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলেই বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পারব। দু-এক ঘণ্টার কোনো আয়োজন সফল করতে আমরা এর প্রস্তুতিতে কতটুকু সময় ব্যায় করি?
আয়োজনের গুরুত্ব অনুযায়ী প্রায় মাসখানেকও ব্যায় হয় প্রস্তুতিতে। এ যদি হয় পার্থিব জীবনের কোনো উৎসবের গুরুত্ব, তাহলে রমজানের প্রস্তুতি কতটুকু হওয়া উচিত? বিষয়টির গুরুত্ব কি আমরা চিন্তা করেছি কখনও?
কেন রাসূল (সা.) শাবান মাসকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন? শাবান থেকে যদি প্রস্তুতি গ্রহণ না করা হয়, তাহলে রমজানের সময়টুকু সঠিকভাবে ব্যায় করা যায় না। শাবান মাসে অনুশীলন যে পরিমাণে হবে, রমজানে ততটুকুরই প্রতিফলন ঘটবে।
রমজান আসে আমাদের কলুষিত আত্মাকে ধুয়ে মুছে সাফ করার জন্য। বছরের পুরোটা সময় পার্থিব ব্যস্ততায় আমাদের জগৎটা অনেকটাই কালো হয়ে যায়, শুভ্রতার আবেশে রমজান সে কলুষিত পরিবেশকে করে তুলে স্বর্গীয়।
রাসূলের যুগে মদিনার পরিবেশেই বুঝা যেত সামনে একটি বিশেষ মাস আসছে। এ মাসগুলো থেকে ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেত কয়েকগুণ।
মূলত মনোসংযোগ পূর্ণভাবে স্থাপিত না হলে কোনো কিছুরই গভীরে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তাই রাসূল (সা.) শাবান মাসে রমজানের সঙ্গে মনোসংযোগ স্থাপনের শিক্ষা দিয়েছেন।