বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ অপরাহ্ন
প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, খালেদা জিয়া প্যারোলে যাওয়ার জন্য কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
আজও (মঙ্গলবার) একটি ইংরেজি পত্রিকা দিন-তারিখসহ দিয়ে দিয়েছে। আমার সঙ্গে কথা বলেছে, আমি বলেছি, এটা ভিত্তিহীন। এ সময় মির্জা ফখরুল হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করার আহ্বান জানান।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পহেলা বৈশাখ, ১৬ ডিসেম্বর- এমন কিছু বিশেষ দিনে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তেমনি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১৪ তারিখও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়। এখানে নতুন কিছু আবিষ্কার করার সুযোগ নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। এসব নির্বাচনে এমন ব্যক্তিদের নির্বাচন করা হয়, যারা মানুষের অধিকার হরণ করেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে একটি শ্রেণী আছে, যারা ভালো আছে।
কারণ তারা একটি গোষ্ঠীর পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। এছাড়া বেশির ভাগ সাংবাদিক বেকার। যারা ‘উপনিবেশবাদ’, ‘আধিপত্যবাদের’ বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের চাকরি থাকে না। ফলে দেখা যায়, একের পর এক পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা। সাংবাদিকদের গুম করা ও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটছে।
দেশের মানুষের অধিকার নেই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের সঙ্গে উল্টো আচরণ করছে। তিনি বলেন, আগে টেলিভিশনে অনেক ব্যক্তি টকশোতে কথা বলতেন। এখন তারা যেন না আসতে পারেন, সেই পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করা হয়েছে।
নুসরাত হত্যাকাণ্ড ও সুবর্ণচরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক কারণে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
দেশে অরাজকতা চলছে, কোনো জবাবদিহিতা নেই। ভূ-রাজনীতির কারণে উদার রাজনীতির দর্শন পরাজিত হচ্ছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সেখানে ফ্যাসিবাদ জায়গা দখল করছে। রাজনীতি এমন কলুষিত হয়েছে যে ভালো মানুষ রাজনীতিতে টিকতে পারছেন না। এটা একক লড়াই নয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, তেমনি এখন স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভূ-রাজনীতির পরিবর্তন হয়েছে, সেই পরিবর্তন সামনে রেখেই এগোতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নির্বাসিত। এ সভা থেকে আমরা এ অনির্বাচিত সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। শুধু তাই নয়, এ সভা থেকে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়া এবং সব বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ডিইউজের নেতা এরফানুল হক নাহিদ, দিদারুল আলম ও শাহজাহান সাজুর পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক তাসনীম আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- এমএ আজিজ, কামাল উদ্দিন সবুজ, আবদুস শহীদ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, আবদুল হাই শিকদার, বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, মুন্সি আবদুল মান্নান প্রমুখ।
রাফি হত্যাকাণ্ডের বিচারের সম্ভাবনা দেখছেন না নজরুল : ফেনী সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডের বিচারের সম্ভাবনা দেখছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যায় হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। ৪৮ মাসে হয়নি, ৪৮ বছরেও হবে না। এখন নুসরাত হত্যার বিচারে আমরা দেখছি ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তি জড়িত আছেন, হয়তো তাদেরও বিচার হবে না। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মঙ্গলবার নুসরাত জাহান রাফী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। নজরুল ইসলাম বলেন, একদিনের মানববন্ধনে এ দেশকে বিচারহীনতা এবং অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।
আমাদের সারা দেশে সব ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, এর আগে কোনো নারী হত্যা বা ধর্ষণের বিচার হয়নি। এ বিচারহীনতা থেকে আমরা যতদিন মুক্ত হতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত মর্যাদাশীল মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও তাদের সন্তান নিরাপদ নয়। আমাদের মা-বোনরাও নিরাপদ নন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, দেশনেত্রীকে জেলখানায় আটকে রেখে তার অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যা তার জন্য আরও কঠিন কারণ হতে পারে। ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নেছারুল হকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশ নেন সংগঠনের সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম, সদস্য শাহ মো. মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।