বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ছয় খাত

বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ছয় খাত

ছয়টি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। এতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাত। বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ ভৌত অবকাঠামো এবং কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানও রয়েছে এ খাতে।

পাশাপাশি সরকারি সেবাদানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নও থাকছে এ তালিকায়। অগ্রাধিকারে আরও থাকছে জলবায়ু মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ ব্যবহার, রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি।

এসব বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই সরকারের শেষ বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিশেষ অগ্রাধিকারের কারণে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এসব খাতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি বলেছেন, আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে মানবসম্পদ খাত। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতও অগ্রাধিকার পাচ্ছে। অবশ্য বরাদ্দের দিক থেকে পরিবহন খাত বেশি পাচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী বাজেট হবে অন্যবারের মতো স্বাভাবিক। এটি ভোটের বাজেট নয়।

নতুন বাজেটে সম্ভাব্য আকার ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরেই কাজ চলছে। এ বাজেটে সম্ভাব্য আয়ের পরিমাণ হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। বাজেটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ৭ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী।

আগামী বাজেট হবে বর্তমান সরকারের শেষ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগের বাজেট। ফলে সরকারের ৯ বছরের অগ্রগতিও প্রাধান্য পাচ্ছে সেখানে।

সূত্রমতে, অন্যান্য বাজেটের মতো এবারও বেশকিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে মোট বাজেটের ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকছে। টাকার অঙ্কে ৮৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৮২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা খাত। সরকার এ তিনটি খাতে বেশি বরাদ্দ দিয়ে এগিয়ে নিতে চাচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার বিনিয়োগ। কিন্তু দেশে এখনও বিনিয়োগের প্রবাহ ভালো হচ্ছে না। যে কারণে বিকল্প হিসেবে মানবসম্পদ খাতকে এগিয়ে আনা হচ্ছে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রাধিকারের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন খাত। ৫১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৪৬ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা।

পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ২১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।

সূত্রমতে, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে আগামী বাজেটে এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কয়লা, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, নিউক্লিয়ার এনার্জি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে। বর্তমান ১৫ হাজার ৯৬৭ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৬৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন।

এ ছাড়া ৫ হাজার ৪২১ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। পাশাপাশি আগামীতে ২৩ হাজার ২৫২ মেগাওয়াটের ২১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস ৯ দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব বিষয় বাজেটে তুলে ধরা হবে। সেখানে গ্যাস মজুদ ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দিকনির্দেশনাও থাকছে।

অগ্রাধিকারের তৃতীয় অবস্থানে আছে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন। এ খাতে মোট বরাদ্দ হচ্ছে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি বাজেটের প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। যা চলতি বাজেটে ছিল ১৫ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে সার, বীজ ও সেচসহ কৃষি উপকরণে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্য এনডাউমেন্ট ফান্ড গঠন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কৃষি সেবা কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানা গেছে। কৃষির আরেকটি দিক হচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ। এ খাতে নতুন বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। এ জন্য সরকার গ্রামমুখী অনেক কিছু রাখছে বাজেটে। আসন্ন বাজেটে পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প সম্প্রসারণ করা হবে।

জোরদার করা হবে সমবায়ভিত্তিক দুধ উৎপাদন কার্যক্রম। গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রত্যন্ত ও চর এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর কাছে সৌরশক্তি পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়া হবে নতুন বাজেটে।

পল্লী মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থার ঘোষণা আসতে পারে। রেশনের মাধ্যমে সরকার ভোটার তুষ্টির একটি পরিকল্পনা নিয়েছে।

এদিকে আগামী বাজেটে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কাজ এগিয়ে নিতে বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আইটি শিল্প বিকাশে ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের অবকাঠামোর কাজ চলছে। এ ছাড়া ৬৩টি জেলার ২৬০০টি ইউনিয়নে উচ্চগতির ফাইভার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণে কাজ চলছে। সরকারি সেবাদানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ থাকবে।

জলবায়ু মোকাবেলায় বাজেটে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। বিশেষ করে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান অনুমোদন দেয়া হবে আগামী বছরে। এ ছাড়া ভৌত অবকাঠামোর মধ্যে রেলে বরাদ্দ বাড়ানো, মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা ও রাস্তার সংস্কার করা হবে।





© All rights reserved © 2017 alltimenewsbd24.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com